# ক্ষয় ও পরিবহণ প্রক্রিয়া-Quick revision Notes ## **ভূমিকা** এই দ্রুত পুনর্বিবেচনা নোটটি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির NCERT পাঠ্যক্রমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা (TET) এবং ত্রিপুরার অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা (যেমন JRBT, TPSC প্রিলিমস) শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী। এখানে **'অশ্মমণ্ডল'** অধ্যায়ের অন্তর্গত **'ক্ষয় ও পরিবহণ'** প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। --- ## **নদী** নদীপ্রবাহ প্রধানত **ক্ষয় (Erosion)**, **পরিবহণ (Transportation)** এবং **সঞ্চয় (Deposition)**—এই তিনটি কাজ করে। ### **ক্ষয়কার্য** * **জলপ্রবাহজনিত ক্ষয়:** নদীর প্রবল স্রোতের আঘাতে ভূমির উপরিভাগের নরম শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। * **অবঘর্ষ ক্ষয় (Abrasion):** নদী বাহিত নুড়ি, পাথর, কাঁকর নদীর তলদেশ ও পার্শ্বদেশকে ঘষে ক্ষয় করে। এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গর্তকে **মন্থকূপ (Potholes)** বলা হয়। * **ঘর্ষণ ক্ষয় (Attrition):** নদীর বাহিত শিলাখণ্ডগুলি নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ভেঙে ক্ষুদ্র ও মসৃণ হয়ে যায়। * **দ্রবণ ক্ষয় (Corrosion):** নদীর জলে দ্রবীভূত চুন, লবণ প্রভৃতি পদার্থ শিলাকে ক্ষয় করে। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **উচ্চগতি:** * **V-আকৃতির উপত্যকা:** দ্রুত জলপ্রবাহের ফলে গভীর, সংকীর্ণ V-আকৃতির উপত্যকা গঠিত হয়। **উদাহরণ:** উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের অনেক নদী, যেমন - তিস্তা নদীর উচ্চগতিতে V-আকৃতির উপত্যকা দেখা যায়। * **জলপ্রপাত (Waterfall):** কঠিন ও নরম শিলাস্তরের সংযোগস্থলে নদী নিচে পড়ে জলপ্রপাত তৈরি করে। **উদাহরণ:** ঝাড়খণ্ডের হুন্ডরু জলপ্রপাত। * **গিরিখাত (Gorge):** দ্রুত জলপ্রবাহের ফলে গভীর ও সংকীর্ণ গিরিখাত গঠিত হয়। **উদাহরণ:** উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রী গিরিখাত। * **মধ্যগতি:** * **মিয়ান্ডার (Meander):** নদীর বাঁক। **উদাহরণ:** গঙ্গা নদীর মধ্য গতিতে মিয়ান্ডার দেখা যায়। * **অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Oxbow Lake):** নদীর বাঁক এতটাই বেশি হয় যে একসময় মূল প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ তৈরি হয়। **উদাহরণ:** পশ্চিমবঙ্গের কালিন্দী নদী বরাবর অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়। * **নিম্নগতি:** * **প্লাবনভূমি (Floodplain):** বন্যার সময় পলি সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমি গঠিত হয়। **উদাহরণ:** গাঙ্গেয় সমভূমি। * **স্বাভাবিক বাঁধ (Levee):** প্লাবনভূমির দু'পাশে পলল জমা হয়ে যে উচ্চভূমি তৈরি হয়, তা-ই স্বাভাবিক বাঁধ। **উদাহরণ:** ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথে স্বাভাবিক বাঁধ দেখতে পাওয়া যায়। * **বদ্বীপ (Delta):** মোহনার কাছে নদী বিভিন্ন শাখায় ভাগ হয়ে ত্রিকোণাকৃতি যে সমভূমি গঠন করে, তাকে বদ্বীপ বলে। **উদাহরণ:** গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ, যা পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। --- ## **হিমবাহ** পাহাড়ের ঢাল বরাবর বরফের বৃহৎ ও ধীর প্রবাহই হলো হিমবাহ। এর প্রধান কাজ **উৎপাটন (Plucking)** এবং **অবঘর্ষ (Abrasion)**। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **উৎপাটন:** হিমবাহের চাপে শিলাস্তরের ফাঁকে জল প্রবেশ করে জমে বরফ হয়, যা শিলাকে উৎপাটিত করে। * **অবঘর্ষ:** হিমবাহের তলদেশে থাকা শিলাখণ্ডগুলি ভূমির উপরিভাগকে ঘষে মসৃণ করে। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **সার্ক (Cirque) বা করি:** হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট হাতলযুক্ত চেয়ারের মতো গর্ত। **উদাহরণ:** হিমালয় অঞ্চলে অনেক সার্ক দেখতে পাওয়া যায়। * **অ্যারেট (Arete):** দুটি সার্কের মধ্যবর্তী তীক্ষ্ণ প্রাচীর। * **হর্ন (Horn):** তিন বা তার বেশি সার্কের সংযোগস্থলে সৃষ্ট পিরামিডের মতো চূড়া। **উদাহরণ:** হিমালয়ের অনেক শৃঙ্গ, যেমন ত্রিশূল পর্বত। * **ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley):** প্রধান হিমবাহের তুলনায় ক্ষুদ্রাকার উপত্যকা, যা প্রধান উপত্যকায় এসে মেশে। **উদাহরণ:** হিমালয়ের অনেক উপনদীর উপত্যকা। * **ইউ-আকৃতির উপত্যকা (U-shaped Valley):** হিমবাহের ক্ষয়কার্যে গভীর, চওড়া U-আকৃতির উপত্যকা গঠিত হয়। **উদাহরণ:** হিমালয় পর্বতমালার উপত্যকা। * **ড্রামলিন (Drumlin):** ডিমের ঝুড়ির মতো দেখতে হিমবাহের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ। * **হিমরেখা (Moraine):** হিমবাহের দ্বারা বাহিত নুড়ি, পলি ও শিলাখণ্ডের সঞ্চয়। --- ## **বায়ু (Aeolian)** বায়ুর কাজ শুষ্ক, মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বায়ুর ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ দ্বারা বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠিত হয়। ### **ক্ষয়কার্য** * **অপসারণ (Deflation):** বায়ুপ্রবাহের দ্বারা আলগা বালি ও ধূলিকণা অপসারিত হয়। * **অবঘর্ষ (Abrasion):** বায়ুবাহিত বালি ও কণা দ্বারা শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। * **ঘর্ষণ (Attrition):** বায়ুবাহিত বালি নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে ভেঙে ক্ষুদ্র হয়। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **ইনসেলবার্গ (Inselberg):** মরুভূমিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অবশিষ্ট থাকা গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি শিলাস্তূপ। **উদাহরণ:** রাজস্থানের আরাবল্লী পর্বতের কিছু বিচ্ছিন্ন টিলা। * **গৌর (Gour):** বায়ুর অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে ভূমিরূপ। **উদাহরণ:** রাজস্থানের মরু অঞ্চলে। * **ইয়ারদাং (Yardang):** বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট কঠিন ও নরম শিলার সমান্তরাল ফালি। * **জুয়েন (Zeugen):** নরম শিলার উপর কঠিন শিলা থাকায় সৃষ্ট টেবিলের মতো ভূমিরূপ। * **বার্খান (Barchan):** অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি। **উদাহরণ:** রাজস্থানের থর মরুভূমি। * **সৈফ বালিয়াড়ি (Seif Dunes):** বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গঠিত বালিয়াড়ি। **উদাহরণ:** থর মরুভূমিতে সইফ বালিয়াড়ি দেখা যায়। --- ## **ভূপৃষ্ঠস্থ জল (Karst)** ভূপৃষ্ঠস্থ বা ভূগর্ভস্থ জল দ্বারা ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজ মূলত চুনাপাথর, ডলোমাইট বা জিপসাম সমৃদ্ধ অঞ্চলে দেখা যায়। এই ধরনের ভূমিরূপকে **কার্স্ট ভূমিরূপ** বলা হয়। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **সিঙ্কহোল (Sinkhole):** দ্রবণ ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট চোঙাকৃতি গর্ত। **উদাহরণ:** মধ্যপ্রদেশের ভেরাঘাট বা ছত্তিশগড়ের চুনাপাথর অঞ্চল। * **দোলাইন (Doline):** কয়েকটি সিঙ্কহোল একত্রিত হয়ে দোলাইন তৈরি হয়। * **পোলজে (Polje):** একাধিক দোলাইন একত্রিত হয়ে গঠিত বড় গর্ত। * **স্ট্যালাকটাইট (Stalactite):** গুহার ছাদ থেকে ঝুলে থাকা চুনের স্তম্ভ। * **স্ট্যালাগমাইট (Stalagmite):** গুহার মেঝে থেকে উপরে উঠে আসা চুনের স্তম্ভ। --- ## **সমুদ্রতরঙ্গ (Marine)** সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ দ্বারা উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠিত হয়। ### **ক্ষয়কার্য** * **অবঘর্ষ (Abrasion):** সমুদ্রতরঙ্গের সঙ্গে বাহিত নুড়ি, কাঁকর দ্বারা উপকূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। * **দ্রবণ ক্ষয় (Corrosion):** সমুদ্রজলে দ্রবীভূত লবণ শিলাকে ক্ষয় করে। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **সমুদ্র গুহা (Sea Cave):** উপকূলের কঠিন শিলায় গুহা তৈরি হয়। * **সমুদ্র স্তম্ভ (Sea Stack):** সমুদ্রগুহার ছাদ ভেঙে পড়ে স্তম্ভ তৈরি হয়। * **সমুদ্র খিলান (Sea Arch):** দুটি গুহার মধ্যে সংযোগস্থলে খিলান তৈরি হয়। * **সমুদ্র সৈকত (Beach):** সমুদ্রতরঙ্গের সঞ্চয়কার্যে বালি সঞ্চিত হয়ে সৈকত গঠিত হয়। * **সমুদ্র বালিয়াড়ি (Sand Dunes):** বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সৈকতের বালি স্থানান্তরিত হয়ে বালিয়াড়ি তৈরি হয়। --- ## **জলবায়ু ও ভূমিরূপের সম্পর্ক** * **আর্দ্র জলবায়ু:** নদী ও হিমবাহের কাজ বেশি। * **শুষ্ক জলবায়ু:** বায়ুর কাজ বেশি। * **উষ্ণ জলবায়ু:** রাসায়নিক আবহাওয়াবিকার বেশি। * **শীতল জলবায়ু:** যান্ত্রিক আবহাওয়াবিকার বেশি। --- ## **পরিবহণ প্রক্রিয়া** ### **নদী পরিবহণ** * **সাসপেনশন:** হালকা কণা জলে ভাসমান অবস্থায় পরিবাহিত হয়। * **সলিউশন:** দ্রবীভূত পদার্থ জলে মিশে পরিবাহিত হয়। * **ট্রেকশন:** বড় শিলাখণ্ড নদীর তলদেশে গড়িয়ে পরিবাহিত হয়। * **সল্টেশন:** মাঝারি আকারের কণা নদীর তলদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে পরিবাহিত হয়। ### **বায়ু পরিবহণ** * **সাসপেনশন:** হালকা ধূলিকণা বাতাসে ভাসমান অবস্থায় পরিবাহিত হয়। * **সলিউশন:** দ্রবীভূত পদার্থ বাতাসে মিশে পরিবাহিত হয়। * **ক্রিপিং:** বড় বালিকণা ভূমির উপর গড়িয়ে পরিবাহিত হয়। * **সল্টেশন:** মাঝারি আকারের কণা ভূমির উপর লাফিয়ে লাফিয়ে পরিবাহিত হয়। --- ## **পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য** ### **সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর** 1. **প্রশ্ন:** ক্ষয় ও পরিবহণের মধ্যে পার্থক্য কী? **উত্তর:** ক্ষয় হলো ভূমির উপরিভাগের শিলা অপসারণ, আর পরিবহণ হলো ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া। 2. **প্রশ্ন:** নদীর উচ্চগতিতে কোন ধরনের উপত্যকা গঠিত হয়? **উত্তর:** V-আকৃতির উপত্যকা। 3. **প্রশ্ন:** হিমবাহের প্রধান ক্ষয়কার্য কী? **উত্তর:** উৎপাটন ও অবঘর্ষ। 4. **প্রশ্ন:** কার্স্ট ভূমিরূপ কোথায় বেশি দেখা যায়? **উত্তর:** চুনাপাথর, ডলোমাইট বা জিপসাম সমৃদ্ধ অঞ্চলে। 5. **প্রশ্ন:** বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে কী ধরনের ভূমিরূপ গঠিত হয়? **উত্তর:** ইনসেলবার্গ, গৌর, ইয়ারদাং, জুয়েন, বার্খান, সৈফ বালিয়াড়ি। ### **বিস্তৃত প্রশ্নোত্তর** 1. **প্রশ্ন:** নদীর ক্ষয়কার্য ও সৃষ্ট ভূমিরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো। 2. **প্রশ্ন:** হিমবাহের কাজ ও ভূমিরূপ গঠন প্রক্রিয়া বর্ণনা করো। 3. **প্রশ্ন:** বায়ুর ক্ষয়কার্য ও মরুভূমির ভূমিরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো। 4. **প্রশ্ন:** জলবায়ু ও ভূমিরূপের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো। --- *এই নোটটি TET, CTET, WBTET, Tripura TET এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।*
# ক্ষয় ও পরিবহণ প্রক্রিয়া-Quick revision Notes ## **ভূমিকা** এই দ্রুত পুনর্বিবেচনা নোটটি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির NCERT পাঠ্যক্রমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা (TET) এবং ত্রিপুরার অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা (যেমন JRBT, TPSC প্রিলিমস) শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী। এখানে **'অশ্মমণ্ডল'** অধ্যায়ের অন্তর্গত **'ক্ষয় ও পরিবহণ'** প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। --- ## **নদী** নদীপ্রবাহ প্রধানত **ক্ষয় (Erosion)**, **পরিবহণ (Transportation)** এবং **সঞ্চয় (Deposition)**—এই তিনটি কাজ করে। ### **ক্ষয়কার্য** * **জলপ্রবাহজনিত ক্ষয়:** নদীর প্রবল স্রোতের আঘাতে ভূমির উপরিভাগের নরম শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। * **অবঘর্ষ ক্ষয় (Abrasion):** নদী বাহিত নুড়ি, পাথর, কাঁকর নদীর তলদেশ ও পার্শ্বদেশকে ঘষে ক্ষয় করে। এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গর্তকে **মন্থকূপ (Potholes)** বলা হয়। * **ঘর্ষণ ক্ষয় (Attrition):** নদীর বাহিত শিলাখণ্ডগুলি নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ভেঙে ক্ষুদ্র ও মসৃণ হয়ে যায়। * **দ্রবণ ক্ষয় (Corrosion):** নদীর জলে দ্রবীভূত চুন, লবণ প্রভৃতি পদার্থ শিলাকে ক্ষয় করে। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **উচ্চগতি:** * **V-আকৃতির উপত্যকা:** দ্রুত জলপ্রবাহের ফলে গভীর, সংকীর্ণ V-আকৃতির উপত্যকা গঠিত হয়। **উদাহরণ:** উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের অনেক নদী, যেমন - তিস্তা নদীর উচ্চগতিতে V-আকৃতির উপত্যকা দেখা যায়। * **জলপ্রপাত (Waterfall):** কঠিন ও নরম শিলাস্তরের সংযোগস্থলে নদী নিচে পড়ে জলপ্রপাত তৈরি করে। **উদাহরণ:** ঝাড়খণ্ডের হুন্ডরু জলপ্রপাত। * **গিরিখাত (Gorge):** দ্রুত জলপ্রবাহের ফলে গভীর ও সংকীর্ণ গিরিখাত গঠিত হয়। **উদাহরণ:** উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রী গিরিখাত। * **মধ্যগতি:** * **মিয়ান্ডার (Meander):** নদীর বাঁক। **উদাহরণ:** গঙ্গা নদীর মধ্য গতিতে মিয়ান্ডার দেখা যায়। * **অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Oxbow Lake):** নদীর বাঁক এতটাই বেশি হয় যে একসময় মূল প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ তৈরি হয়। **উদাহরণ:** পশ্চিমবঙ্গের কালিন্দী নদী বরাবর অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়। * **নিম্নগতি:** * **প্লাবনভূমি (Floodplain):** বন্যার সময় পলি সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমি গঠিত হয়। **উদাহরণ:** গাঙ্গেয় সমভূমি। * **স্বাভাবিক বাঁধ (Levee):** প্লাবনভূমির দু'পাশে পলল জমা হয়ে যে উচ্চভূমি তৈরি হয়, তা-ই স্বাভাবিক বাঁধ। **উদাহরণ:** ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথে স্বাভাবিক বাঁধ দেখতে পাওয়া যায়। * **বদ্বীপ (Delta):** মোহনার কাছে নদী বিভিন্ন শাখায় ভাগ হয়ে ত্রিকোণাকৃতি যে সমভূমি গঠন করে, তাকে বদ্বীপ বলে। **উদাহরণ:** গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ, যা পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। --- ## **হিমবাহ** পাহাড়ের ঢাল বরাবর বরফের বৃহৎ ও ধীর প্রবাহই হলো হিমবাহ। এর প্রধান কাজ **উৎপাটন (Plucking)** এবং **অবঘর্ষ (Abrasion)**। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **উৎপাটন:** হিমবাহের চাপে শিলাস্তরের ফাঁকে জল প্রবেশ করে জমে বরফ হয়, যা শিলাকে উৎপাটিত করে। * **অবঘর্ষ:** হিমবাহের তলদেশে থাকা শিলাখণ্ডগুলি ভূমির উপরিভাগকে ঘষে মসৃণ করে। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **সার্ক (Cirque) বা করি:** হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট হাতলযুক্ত চেয়ারের মতো গর্ত। **উদাহরণ:** হিমালয় অঞ্চলে অনেক সার্ক দেখতে পাওয়া যায়। * **অ্যারেট (Arete):** দুটি সার্কের মধ্যবর্তী তীক্ষ্ণ প্রাচীর। * **হর্ন (Horn):** তিন বা তার বেশি সার্কের সংযোগস্থলে সৃষ্ট পিরামিডের মতো চূড়া। **উদাহরণ:** হিমালয়ের অনেক শৃঙ্গ, যেমন ত্রিশূল পর্বত। * **ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley):** প্রধান হিমবাহের তুলনায় ক্ষুদ্রাকার উপত্যকা, যা প্রধান উপত্যকায় এসে মেশে। **উদাহরণ:** হিমালয়ের অনেক উপনদীর উপত্যকা। * **ইউ-আকৃতির উপত্যকা (U-shaped Valley):** হিমবাহের ক্ষয়কার্যে গভীর, চওড়া U-আকৃতির উপত্যকা গঠিত হয়। **উদাহরণ:** হিমালয় পর্বতমালার উপত্যকা। * **ড্রামলিন (Drumlin):** ডিমের ঝুড়ির মতো দেখতে হিমবাহের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ। * **হিমরেখা (Moraine):** হিমবাহের দ্বারা বাহিত নুড়ি, পলি ও শিলাখণ্ডের সঞ্চয়। --- ## **বায়ু (Aeolian)** বায়ুর কাজ শুষ্ক, মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বায়ুর ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ দ্বারা বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠিত হয়। ### **ক্ষয়কার্য** * **অপসারণ (Deflation):** বায়ুপ্রবাহের দ্বারা আলগা বালি ও ধূলিকণা অপসারিত হয়। * **অবঘর্ষ (Abrasion):** বায়ুবাহিত বালি ও কণা দ্বারা শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। * **ঘর্ষণ (Attrition):** বায়ুবাহিত বালি নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে ভেঙে ক্ষুদ্র হয়। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **ইনসেলবার্গ (Inselberg):** মরুভূমিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অবশিষ্ট থাকা গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি শিলাস্তূপ। **উদাহরণ:** রাজস্থানের আরাবল্লী পর্বতের কিছু বিচ্ছিন্ন টিলা। * **গৌর (Gour):** বায়ুর অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে ভূমিরূপ। **উদাহরণ:** রাজস্থানের মরু অঞ্চলে। * **ইয়ারদাং (Yardang):** বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট কঠিন ও নরম শিলার সমান্তরাল ফালি। * **জুয়েন (Zeugen):** নরম শিলার উপর কঠিন শিলা থাকায় সৃষ্ট টেবিলের মতো ভূমিরূপ। * **বার্খান (Barchan):** অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি। **উদাহরণ:** রাজস্থানের থর মরুভূমি। * **সৈফ বালিয়াড়ি (Seif Dunes):** বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গঠিত বালিয়াড়ি। **উদাহরণ:** থর মরুভূমিতে সইফ বালিয়াড়ি দেখা যায়। --- ## **ভূপৃষ্ঠস্থ জল (Karst)** ভূপৃষ্ঠস্থ বা ভূগর্ভস্থ জল দ্বারা ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজ মূলত চুনাপাথর, ডলোমাইট বা জিপসাম সমৃদ্ধ অঞ্চলে দেখা যায়। এই ধরনের ভূমিরূপকে **কার্স্ট ভূমিরূপ** বলা হয়। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **সিঙ্কহোল (Sinkhole):** দ্রবণ ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট চোঙাকৃতি গর্ত। **উদাহরণ:** মধ্যপ্রদেশের ভেরাঘাট বা ছত্তিশগড়ের চুনাপাথর অঞ্চল। * **দোলাইন (Doline):** কয়েকটি সিঙ্কহোল একত্রিত হয়ে দোলাইন তৈরি হয়। * **পোলজে (Polje):** একাধিক দোলাইন একত্রিত হয়ে গঠিত বড় গর্ত। * **স্ট্যালাকটাইট (Stalactite):** গুহার ছাদ থেকে ঝুলে থাকা চুনের স্তম্ভ। * **স্ট্যালাগমাইট (Stalagmite):** গুহার মেঝে থেকে উপরে উঠে আসা চুনের স্তম্ভ। --- ## **সমুদ্রতরঙ্গ (Marine)** সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ দ্বারা উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠিত হয়। ### **ক্ষয়কার্য** * **অবঘর্ষ (Abrasion):** সমুদ্রতরঙ্গের সঙ্গে বাহিত নুড়ি, কাঁকর দ্বারা উপকূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। * **দ্রবণ ক্ষয় (Corrosion):** সমুদ্রজলে দ্রবীভূত লবণ শিলাকে ক্ষয় করে। ### **সৃষ্ট ভূমিরূপ** * **সমুদ্র গুহা (Sea Cave):** উপকূলের কঠিন শিলায় গুহা তৈরি হয়। * **সমুদ্র স্তম্ভ (Sea Stack):** সমুদ্রগুহার ছাদ ভেঙে পড়ে স্তম্ভ তৈরি হয়। * **সমুদ্র খিলান (Sea Arch):** দুটি গুহার মধ্যে সংযোগস্থলে খিলান তৈরি হয়। * **সমুদ্র সৈকত (Beach):** সমুদ্রতরঙ্গের সঞ্চয়কার্যে বালি সঞ্চিত হয়ে সৈকত গঠিত হয়। * **সমুদ্র বালিয়াড়ি (Sand Dunes):** বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সৈকতের বালি স্থানান্তরিত হয়ে বালিয়াড়ি তৈরি হয়। --- ## **জলবায়ু ও ভূমিরূপের সম্পর্ক** * **আর্দ্র জলবায়ু:** নদী ও হিমবাহের কাজ বেশি। * **শুষ্ক জলবায়ু:** বায়ুর কাজ বেশি। * **উষ্ণ জলবায়ু:** রাসায়নিক আবহাওয়াবিকার বেশি। * **শীতল জলবায়ু:** যান্ত্রিক আবহাওয়াবিকার বেশি। --- ## **পরিবহণ প্রক্রিয়া** ### **নদী পরিবহণ** * **সাসপেনশন:** হালকা কণা জলে ভাসমান অবস্থায় পরিবাহিত হয়। * **সলিউশন:** দ্রবীভূত পদার্থ জলে মিশে পরিবাহিত হয়। * **ট্রেকশন:** বড় শিলাখণ্ড নদীর তলদেশে গড়িয়ে পরিবাহিত হয়। * **সল্টেশন:** মাঝারি আকারের কণা নদীর তলদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে পরিবাহিত হয়। ### **বায়ু পরিবহণ** * **সাসপেনশন:** হালকা ধূলিকণা বাতাসে ভাসমান অবস্থায় পরিবাহিত হয়। * **সলিউশন:** দ্রবীভূত পদার্থ বাতাসে মিশে পরিবাহিত হয়। * **ক্রিপিং:** বড় বালিকণা ভূমির উপর গড়িয়ে পরিবাহিত হয়। * **সল্টেশন:** মাঝারি আকারের কণা ভূমির উপর লাফিয়ে লাফিয়ে পরিবাহিত হয়। --- ## **পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য** ### **সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর** 1. **প্রশ্ন:** ক্ষয় ও পরিবহণের মধ্যে পার্থক্য কী? **উত্তর:** ক্ষয় হলো ভূমির উপরিভাগের শিলা অপসারণ, আর পরিবহণ হলো ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া। 2. **প্রশ্ন:** নদীর উচ্চগতিতে কোন ধরনের উপত্যকা গঠিত হয়? **উত্তর:** V-আকৃতির উপত্যকা। 3. **প্রশ্ন:** হিমবাহের প্রধান ক্ষয়কার্য কী? **উত্তর:** উৎপাটন ও অবঘর্ষ। 4. **প্রশ্ন:** কার্স্ট ভূমিরূপ কোথায় বেশি দেখা যায়? **উত্তর:** চুনাপাথর, ডলোমাইট বা জিপসাম সমৃদ্ধ অঞ্চলে। 5. **প্রশ্ন:** বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে কী ধরনের ভূমিরূপ গঠিত হয়? **উত্তর:** ইনসেলবার্গ, গৌর, ইয়ারদাং, জুয়েন, বার্খান, সৈফ বালিয়াড়ি। ### **বিস্তৃত প্রশ্নোত্তর** 1. **প্রশ্ন:** নদীর ক্ষয়কার্য ও সৃষ্ট ভূমিরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো। 2. **প্রশ্ন:** হিমবাহের কাজ ও ভূমিরূপ গঠন প্রক্রিয়া বর্ণনা করো। 3. **প্রশ্ন:** বায়ুর ক্ষয়কার্য ও মরুভূমির ভূমিরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো। 4. **প্রশ্ন:** জলবায়ু ও ভূমিরূপের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো। --- *এই নোটটি TET, CTET, WBTET, Tripura TET এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।*